ক্যানন বল বা নাগলিঙ্গমের অজানা সব কথা- Couroupita Guianaensis
কেননবল এর আদি বাড়ি দক্ষিণ আমেরিকার বনাঞ্চল। ফ্রেঞ্চ বোটানিস্ট ফুসে এবলিট (Fusée Aublet) ছিলেন ফ্রেঞ্চ ইস্ট ইন্ডিয়া কোং এর একজন উদ্ভিদ সংগ্রাহক, ফ্রেঞ্চ গায়েনায় তিনিই প্রথম ১৭৭৫ সালে এর নামকরন করেন ( Couroupita Guianaensis )। এর সাধারন অনেক নাম আছে যেমন: কামানের গোলা , ব্রাজিল নাট, হ্যাভেন নাট, নাগলিঙ্গম ।
এদেশে কীভাবে এলো সে সঠিক ইতিহাস আমার জানা নাই । তবে ধরে নেওয়া যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোং বাণিজ্যিক জাহাজ এবং এর উদ্ভিদ সংগ্রাহক,রা এর বাহক হতে পারে । এই গাছকে বলা হয় বোটানিকাল গার্ডেন ট্রি । এই গাছের সব কিছুই বোটানিস্টদের আগ্রহের বিষয় । যেমন ফুলের গঠন, কান্ড ভেদ কের মনোরম ঘ্রানযুক্ত হাজার ফুল,এবং ফল, নাগলিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে । এই গাছকে দুর্লভ বা লাল তালিকায় রাখা হয়েছে এবং উদ্ভিদটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক হওয়ায় অনেক দেশই এর বিস্তারের জন্য কাজ করছে । এশিয়ায় নাগলিঙ্গম গাছকে শিব মন্দিরের পুজার অনুসংগ করা হয়েছে ।
কিন্তু কুমুদিনীর মতো এক বিশাল প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের অংশীদার হয়ে আছে বিরল প্রজাতির এগাছটি -
নাম নাগলিঙ্গম। গাছটির নিচে দাঁড়িয়ে মৌ মৌ গন্ধে এক অন্যরকম ভালবাসা ছবি আঁকে মনের ভিতর। দুর্লভ নাগলিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে
অসংখ্য কলি নাগ ফনার মতো উদ্যত বাঁকানো ঠিক যেন সাপের ফনা। ফুটেছে বর্নে গন্ধে অপরুপ উজ্জ্বলতায় পুষ্পরাজ্যের অতুলনীয় নাগলিঙ্গম ফুল। গাছের অমসৃণ শরীর ফুঁড়ে বের হওয়া ফুল ছড়াচ্ছে স্নিগ্ধ মিষ্টি গন্ধ। কুমুদিনীর বাগানে অনেক দিন থেকেই ফুটছে। আশেপাশে আর কোথাও দেখিনি গাছটা।
শুনেছি আমাদের দেশে এগাছের সংখ্যা হাতে গোনা। মনে পড়ছে বহুদিন আগে ময়মনসিংহ মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (শশীলজ) এর পুকুরের কোল ঘেষে একটি পুরাতন নাগলিঙ্গম গাছ দেখেছিলাম। অজস্র ফুল ফোটা আর ঝরা ফুলের পাপড়ির স্তুপ - যেন ছোটখাটো রঙিন পাহাড় গড়ে তুলেছে যা দেখে আমার বিস্ময়ের অবধি ছিলনা।
রমনার গুটিকয়েক নাগলিঙ্গম অনেকের কাছে পরিচিত। আর একটি গাছ দেখেছি যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ফটকে। বলদা গার্ডেন ও নটরডেম কলেজের নাগলিঙ্গম গাছও খুব বিখ্যাত। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিএম কলেজ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, গফরগাঁও সরকারি কলেজ, গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় - এরকম খুঁজে পেতে দেখা যাবে সারা দেশে হয়তো ৭০/৮০টি গাছ আছে।
ফুলের রঙ, আভিজাত্য, মঞ্জুরী, গঠন শৈলী সব মিলিয়ে অনবদ্য নাগলিঙ্গম। গাছের শরীর ফুঁড়ে বের হয় দড়ির মতো এক ধরনের দন্ডের মঞ্জুরীতে ফুল ফোটে। মার্চে ফুল শুরু, জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত গাছে ফুল শোভা পায়।
কিন্তু এবার দেখছি শেষ নভেম্বরেও গাছ জুড়ে ফুলের মেলা। মৌমাছি আর ছোটো ছোট পাখিদের ঘর সংসার - কলকাকলীতে মুখর গাছটি।
এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো শাখার দন্ডে নয় কান্ডে ফুল বের হয়। প্রধান কান্ডটি ৪০ থেকে ৫০ ফিট দীর্ঘ হয়। ছাতিমের মতো সবুজ বড়সড় পাতা, গাছটির শীর্ষ প্রসারিত বহু শাখায় নিবিড়।
বছরে দু'তিনবার পাতা ঝরালেও কখনো পত্রহীন হয় না।
গাছ লাগানোর পর অন্তত ১০ বছর অপেক্ষা করতে হয় ফুলের জন্য।
বন্ধু সাহানা চৌধুরীর সাথে আলাপ করে জানলাম গাছটি আসলে ফুলের গাছ হিসেবে মানায় না। জঙ্গলে গাছ। বোটানিকাল ফুলের কারণেই সে আলোচিত। ফুল শেষে ফল ধরে। সে ফল ব্যাপক হারে নয়।
নাগ ফল দেশী কদবেলর মতো গোল ও কিছুটা বড় যা নাকি আবার হাতির বেশ প্রিয় খাবার।
আমাদের ক্যাম্পাসে তো হাতি নেই ছোট বাচ্চারা সেগুলো নিয়ে খেলা করে। ভাবছি ফল সংগ্রহ করে চারা বানানোর চেষ্টা করবো। সেই গাছ বড়ো হবে, ফুল ধরবে সেই আশায় বসে থেকে থেকে ততদিনে আমার ভবলীলা সাঙ্গ।
নাগলিঙ্গমের ইংরেজি নাম canon Ball
Lacythidaceac পরিবারের এফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম
Couroupita Guianaensis
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন