হেনা সুলতানা ।
ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা --------------------------------- উজ্জ্বল সবুজ
ঘনবদ্ধ পাতার ফাঁকে ফুটে আছে সোনালী আভা ছড়ানো ফুলগুলো। আমার ঘরের খুব কাছাকাছি গাছটি।
গ্রীষ্মের শুরুতেই ফুল এসেছে। থাকবে প্রায় বর্ষা শরৎ অবধি। মন মাতানো মিষ্টি সুঘ্রাণ।
রাতেই যেন টের পাওয়া যায় আরও বেশি করে। ঘুম আসেনা ফুলের গন্ধে। কত স্মৃতি জাগানিয়া
গান কবিতা এসে ভিড় করে। আমার মনে পড়ে - ফুলের গন্ধে ঘুম আসেনা একলা জেগে রই মাগো আমার
শোলক বলা কাজলা দিদি কই। মনে পড়ে যতিন্দ্র মোহন বাগচিকে মাকে কাজলা দিদিকে... কোথায়
হারালো তারা!!! গাছের তলা দিয়ে হেঁটে যেত যেতে এর সুঘ্রাণ পথচারিকে আকৃষ্ট করবেই।
Chompa Flower Bud |
Champa_Flower |
Champa_Seedpod |
কবি
গুরু রবীন্দ্রনাথ শিশুদের জন্য লুকোচুরী শিরোনামে যে ছড়া লিখেছেন সেখানে তিনি সারা
দিনমান চাঁপা ফুল হয়ে মায়ের সাথে লুকোচুরী খেলে, সাঁজের বেলা আবার মায়ের খোকা হয়েছেন
তার কল্পলোকে, এর থেকে আমরা কবি গুরুর চাঁপাফুলের প্রতি ভালোবাসা, উচ্ছাসকে বুঝতে পারি
। ফুলের সুষমায় কাব্যে উপহারে অর্চনায়... কোথায় নেই তার আদর!! সে যে আমার স্বর্নচাঁপা
স্বর্নচাঁপা ফুল। ১৯শে এপ্রিল রাত ভর বৃষ্টি। একই ছন্দে। খুব সকালে ম্লান আলোয় ভেজা
পথটায় হাঁটতে ইচ্ছে হলো খুব। করোনার দাপটে লকডাউনের কারাগারে দমবন্ধ হবার যোগাড়। তবু
সাথী হলো বন্ধু পূরবী। চারপাশ কী এক অপূর্ব স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দুচোখ ভরে
দেখছি। প্রকৃতি মানুষকে বুক দিয়ে আগলে আছে, তার সবটুকু উজাড় করে দিয়ে যাচ্ছে। আর মানুষ?
নিজের স্বার্থে তাকে দুমড়ে মুচড়ে ধংস করছে। তার কোন মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে এখন শিক্ষাও
তো কম পাচ্ছে না!! মানুষের নিষ্ঠুরতায় কত গাছ যে হারিয়ে গেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।
আগে গ্রামেগঞ্জে খুব দেখতাম স্বর্নচাঁপা।এখন তেমন চোখে পড়ে না। কুমুদিনীর আরবরিয়ামে
যত্নে একটি গাছ নিরবে ফুল ফুটিয়ে সৌন্দর্য পিপাসুদের নান্দনিক আবেদন মিটিয়ে যাচ্ছে।
চাঁপা নামের যত ফুল আছে সৌন্দর্যের চাইতে তারা সুগন্ধির জন্যই বিখ্যাত। স্বর্নচাঁপা
মূলত পাহাড়ি গাছ। সমতলেও তার সমানতালে স্বাভাবিক বৃদ্ধি। দ্রুত বাড়ে, দীর্ঘ জীবন আর
অফুরান ফুল ফুটানো। একক ফুলটিতে পাপড়ি সংখ্যা প্রায় ১৫ ফুল শেষে গুচ্ছ গুচ্ছ আঙ্গুরের
মতো ফল ধরে। তাও দেখবার মত। কাক- শালিকের প্রিয় খাবার। স্বর্নচাঁপার ভেষজ গুণ অনন্য।
বাকল ও ফুল বাতরোগের ওষুধ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Michelia champaca. মনে পড়ছে ময়মনসিংহ গীতিকায় আছে - চাইর
কোনা পুষ্কুনির পারে চম্পা নাগেশ্বর/ ডাল ভাঙ্গ পুষ্প তোল কে গো তুমি নাগর? চাঁপাফুলকে
আঞ্চলিক ভাষায় চম্পা ফুল বলে।১৮-২১ মিটার লম্বা হয়। এখন বামন সেপের গ্রাফটেড স্বর্ণচাঁপা
ছাদ বাগানের জন্য জনপ্রিয় ।নতুন বনায়নের জন্য চাঁপা আদর্শ গাছ, এর স্বর্গিয় সুবাস,ভেষজ
গুন,টিক হিসাবে এর স্থান প্রথম সারিতে ।
লুকোচুরী
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আমি যদি দুষ্টুমি
করে
চাঁপার গাছে চাঁপা
হয়ে ফুটি,
ভোরের বেলা মা গো,
ডালের পরে
কচি পাতায় করি লুটোপুটি,
তবে তুমি আমার কাছে
হারো,
তখন কি মা চিনতে
আমায় পারো ।
তুমি ডাক, খোকা
কোথায় ওরে ।
আমি শুধু হাসি চুপটি
করে ।
যখন তুমি থাকবে
যে কাজ নিয়ে
সবই আমি দেখব নয়ন
মেলে ।
স্নানটি করে চাঁপার
তলে দিয়ে
আসবে তুমি পিঠেতে
চুল ফেলে;
এখান দিয়ে পুজোর
ঘরে যাবে,
দুরের থেকে ফুলের
গন্ধ পাবে-
তখন তুমি বুঝতে
পারবে না সে
তোমার খোকার গায়ের
গন্ধ আসে ।
দুপুর বেলা মহাভারত-হাতে
বসবে তুমি সবার
খাওয়া হলে,
গাছের ছায়া ঘরের
জানালাতে
পড়বে এসে তোমার
পিঠে কোলে,
আমি আমার ছোট্ট
ছায়াখানি
দোলাব তোর বইয়ের
পরে আনি-
তখন তুমি বুঝতে
পারবে না সে
তোমার চোখে খোকার
ছায়া ভাসে ।
সন্ধেবেলায় প্রদীপখানি
জ্বেলে
যখন তুমি যাবে গোয়ালঘরে
তখন আমি ফুলের খেলা
খেলে
টুপ করে মা, পড়ব
ভুঁয়ে ঝরে ।
আবার আমি তোমার
খোকা হব,
গল্প বলো তোমায়
গিয়ে কব ।
তুমি বলবে, দুষ্টু,
ছিলি কোথা ।
আমি বলব,বলব না
সে কথা ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন